সারাহ-লি হেনরিখ, জার্মিানির গ্রিনস ইউথ পার্টির একজন উদিয়মান তারকা। তার এই দলটি বামপন্থি। গত ৯ অক্টোবর দলের অফিসিয়াল মুখপাত্র হিসেবে ২০ বছর বয়সি লির নাম ঘোষণা করা হয়েছিলো। এর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছেয়ে যায় ঘৃণামূলক মন্তব্যে। তার মেইলে আসে মৃত্যুর হুমকি। এতে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন তিনি।

সারা-লি’র গায়ের রঙ কালো। তিনি একজন নারী। তার ধর্ম মুসলমান। তিনি জার্মানিতে পরিবেশ সংরক্ষণ, সমান অধিকার এবং রাজনীতিতে সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে সোচ্চার থাকেন।

সারা-লি’র গায়ের রঙ কালো। তিনি একজন নারী। তার ধর্ম মুসলমান। ছবি : টিআরটিওয়ার্ল্ড
সারা-লি’র গায়ের রঙ কালো। তিনি একজন নারী। তার ধর্ম মুসলমান। ছবি : টিআরটিওয়ার্ল্ড

জার্মানিতে সারাহ লি’র ঘটনাটিই একমাত্র নয়। দেশটিতে ডানপন্থিরা সংখ্যালঘু রাজনীতিবিদদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলছে বলে একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটিওয়ার্ল্ড। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন সাল আহমেদ।

টিআরটির ওই প্রতিবেদনে তুলে আনা হয় সিরিয়ান বংশোদ্ভূত তারিক আলাওস নামেরি আরেক রাজনীতিবিদের কথা। তিনি গ্রিন পার্টির হয়ে জার্মান পার্লামেন্টে যাওয়ার জন্য প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে মৃত্যুর হুমকি পাওয়ার পর প্রার্থীতা থেকে সরে আসতে বাধ্য হন। এমনকি তিনি রাজনীতি থেকেও বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

সুসান চেলবির জন্ম ও বেড়ে ওঠা জার্মানিতে। তবে তিনি ফিলিস্তিনী বংশোদ্ভূত। বার্লিনের রাজনীতিতে ৪৩ বছর বয়সি এই নারীর ভালো প্রভাব রয়েছে। তিনি বলেন, ‘জার্মানীর রাজনীতিতে সংখ্যালঘুদের প্রবেশ মানেই, তিনি চরম দক্ষিণপন্থীদের দ্বারা আক্রান্ত হবেন। এটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ। পেছন থেকে এর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর জন্য ফান্ডিংও করা হয়।’

সুসান চেলবি বর্তমানে বার্লিন রাজ্যের ফেডারেল অ্যাফেয়ারের সেক্রেটারি এবং সিনেটে উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি যখন ২০১৬ সালে স্ট্যাট সেক্রেটারি হই, তখন আমার বিরুদ্ধে ঘৃণা খুব জোরালো হয়ে উঠে। আমিও নিজের কথা বলে গিয়েছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে আমার বিরুদ্ধে ছড়ানো ঘৃণা অসহ্য হয়ে উঠেছিলো। আমাকে অনেকবার মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয়েছিলো। রাস্তায় শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়েছিলো। আমি কিছু টুইট করার পরই ঘৃণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই নয়, ঘৃণার বার্তা নিয়ে আমার কাছে ডাকে চিঠিও আসে’

সুসান চেলবি বর্তমানে বার্লিন রাজ্যের ফেডারেল অ্যাফেয়ারের সেক্রেটারি এবং সিনেটে উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন। ছবি : টিআরটিওয়ার্ল্ড

সুসান জানিয়েছেন, হয়রানির তীব্রতা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অনেককে রাজনীতিতে প্রবেশ করতে নিরুৎসাহিত করেছে। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে এই ঘৃণামূলক প্রচার চালানোর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ঘৃণার বার্তাসহ তার কাছে আসা পোস্টকার্ডগুলোর ভাষা পড়ে শুনাতে শুনাতে হেসে উঠেন সুসান চেলবি। এসবে বর্ণবাদী এবং যৌনতায় ভরপুর হুমকি থাকে।

তার কাছে পাঠানো একটি বার্তায় লেখা আছে, ‘তুমি কী করছো, এ ব্যাপারে তোমার কোনো ধারণাই নেই। রাজনীতি করতে চাও? এটা যদি ভেবে থাকো, তাহলে তুমি সম্পূর্ণ পাগল হয়েছো। তুমি মানসিক সমস্যায় ভুগছো। …। ফা… অব আউট অব জার্মানি, দিস ইজ দি ফাইনাল ওয়ার্নিং। আমরা তোমাদের সবাইকে মেরে ফেলবো। উই উইল ফা… ইউ। উই উইল বিট ইউ আপ।’

সুসান জানান, রাস্তায় এক লোক তার পথ আগলে দাঁড়িয়েছিলো। লোকটার চামড়ায় প্রচুর ট্যাটু আঁকা ছিলো।

তিনি বলেন, ‘সে আমাকে বলেছিলো- তুমি যেখান থেকে এসেছো, সেখানে ফিরে যাও। এরপর লোকটা আমাকে ধাক্কা দিয়েছিলো।’

সুসান বলেন, ‘ওই ঘটনাটা তখন আমি কাউকে জানাইনি। আমার বন্ধুদের কিংবা পরিবারকেও না। আমি ভয় পেয়েছিলাম, কারণ তারা আমাকে হয়তো ক্যারিয়ার পরিবর্তন করতে বলতে পারেন।’

এখন সময়/শামুমো